সোমালিয়ার জলদস্যুদের থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধার হয়েছে?

Published on: March 22, 2024

যা দাবি করা হয়েছে: ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডো দল সোমালিয়ার জলদস্যুদের থেকে বাংলাদেশের ছিনতাই হওয়া নৌ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করেছে।

যা পাওয়া যাচ্ছে: সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে এখনো জিম্মি রয়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ “এমভি আব্দুল্লাহ”। জলদস্যুদের কাছে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ “এমভি আব্দুল্লাহ” উদ্ধারে সোমালিয়ার পুলিশ ও বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরা মিলে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এবং ২৩ নাবিককে জিম্মি করে রাখা সোমালিয়ান জলদস্যুরা প্রথমবারের মতো ১৯ মার্চ মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ 

১২ মার্চ ২০২৪ তারিখে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে পণ্যবাহী বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি দখলে নিয়ে সেখানে থাকা ২৩ বাংলাদেশি ক্রুকে জিম্মি করে দস্যুরা। জাহাজটি আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। মূলত এ সময় জলদস্যুরা জাহাজের দখল নেয়। আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন এখানে

১৫ মার্চ ২০২৪ তারিখে ভারতের নৌবাহিনী এক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছিল, সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সহায়তা করতে কাছাকাছি এলাকায় তাদের একটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি দূরপাল্লার সামুদ্রিক টহল উড়োজাহাজ অবস্থান করছে। জাহাজ জিম্মির খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ১২ মার্চই ভারতীয় নৌবাহিনী দূরপাল্লার মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্র্যাফ্ট এলআরএমপি পি-৮১ মোতায়েন করে। এয়ারক্র্যাফ্টটি জাহাজের ক্রুদের অবস্থা জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করে। তবে জাহাজ থেকে কোনো সাড়া পায়নি। আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন এখানে

প্রসঙ্গগত যে, এ ঘটনার পরে ১৬ মার্চ ২০২৪ তারিখে ‘‘ছিনতাইকৃত বাংলাদেশের-পতাকাবাহী জাহাজ উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী/Navy rescues hijacked Bangladesh-flagged ship’’ শিরোনামে এমভি আব্দুল্লাহকে নিয়ে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যদিও প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশে এমভি আব্দুল্লাহকে কখন বা কিভাবে উদ্ধার করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি। এমন কোনো প্রমাণ ও পেশ করেনি যা দেখে ঘটনার সত্যতা জানা যাবে। তবে গণমাধ্যমগুলো কিছুক্ষণ পরেই তাদের শিরোনাম পরিবর্তন করে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন এখানে

উল্লেখ্য, ১৫ মার্চ ২০২৪ তারিখে  এমভি রুয়েন নামের বাল্ক ক্যারিয়ারের মাল্টার পতাকাবাহী একটিজাহাজ উদ্ধার করে ভারতীয় নৌবাহিনী। ১৬ মার্চ একটি বিবৃতির মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনী জানায়, গত শুক্রবার প্রথমে তারা এমভি রুয়েনকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরে জাহাজে থাকা জলদস্যুদের সবাইকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। একপর্যায়ে জাহাজটিতে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাই তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সুতরাং ভারতীয় নৌবাহিনী জলদস্যুদের কাছ থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ নয় বরং মাল্টার জাহাজ রুয়েন উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। বিস্তারিত জানতে পারবেন এখানে

১৯ মার্চ ২০২৪ তারিখে বিবিসি বাংলা থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমভি আব্দুল্লাহ এবং জিম্মি নাবিকদের জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করতে সোমালি পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে । অপরদিকে এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে যাওয়ার পর জিম্মি নাবিকদের ‘জোরপূর্বক’ উদ্ধারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। মূলত নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রস্তাবটির ব্যাপারে সরকার ও মালিকপক্ষ রাজি হয়নি। বিস্তারিত জানতে পারবেন এখানে

বলাবাহুল্য, জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণের থাকা জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান মনিটর করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পাশাপাশি বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশানও (বিএমএমওএ) জাহাজটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তারা জানিয়েছে, সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূলের কাছে জাহাজটি নোঙর করে রেখেছে জলদস্যুরা। গদবজিরান শহর থেকেও বর্তমানে ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে জাহাজটি।

২০ মার্চ ২০২৪ তারিখে প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা গেছে, ২৩ জন নাবিকসহ জাহাজ জিম্মি করার ৯ দিনের মাথায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। জাহাজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, যোগাযোগ শুরু হওয়ায় এখন জলদস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করতে পারে। দর-কষাকষি করে সমঝোতায় পৌঁছালে জাহাজসহ নাবিকদের মুক্তি মিলতে পারে। বিস্তারিত জানতে পারবেন এখানে

সুতরাং ভারতীয় নৌবাহিনী সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে বাংলাদেশি জাহাজটি করেনি। উদ্ধার অভিযান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সঙ্গত কারণে এমন দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh