ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন নিয়ে বিভ্রান্তিকর পোস্ট

Published on: September 13, 2023

গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল ২০২৩’ উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ উক্ত বিলটি সংসদে পাস হয়। পরবর্তী ধাপে আইন হিসেবে প্রণয়নের জন্য বিলটি রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করা হবে এবং তিনি সম্মতি প্রদান করলে বিলটিকে সংসদের আইন হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। যেহেতু ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের খসড়াটি সংসদে গৃহীত হয়েছে কেবল এবং তা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আইন হিসেবে অভিহিত হওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে, সেহেতু এটা স্পষ্ট যে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত দাবিটি সঠিক নয়। তাছাড়া, ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এইধরণের দাবিকে গুজব বা ভুয়া খবর হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে উত্থাপিত দাবিটির যথাযথতা যাচাই করতে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল সার্চ করে আমরা সময় নিউজ, বাংলা ট্রিবিউন, দেশ রূপান্তর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর, প্রভৃতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু সংবাদ খুঁজে পেয়েছি। উক্ত সংবাদগুলোতে বলা হয়েছে, ‘দলিল যার, জমি তার’ – এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের নিমিত্তে গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ জাতীয় সংসদে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল, ২০২৩’ নামক একটি আইনের খসড়া উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। পরবর্তীতে গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ উক্ত বিলটি জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়। বাংলাদেশের সংবিধান এর আইন প্রণয়ন ও অর্থসংক্রান্ত পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট পরিচ্ছেদের ৮০ নং অনুচ্ছেদের প্রথম এবং দ্বিতীয় ধারায় বলা হয়েছে যে, “আইনপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে আনীত প্রত্যেকটি প্রস্তাব বিল আকারে উত্থাপিত হইবে” এবং “সংসদ কর্তৃক কোন বিল গৃহীত হইলে সম্মতির জন্য তাহা রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিতে হইবে।” উক্ত ৮০ নং অনুচ্ছেদের পঞ্চম ধারায় বলা হয়েছে, “সংসদ কর্তৃক গৃহীত বিলটিতে রাষ্ট্রপতি সম্মতিদান করিলে বা তিনি সম্মতিদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইলে তাহা আইনে পরিণত হইবে এবং সংসদের আইন বলিয়া অভিহিত হইবে।” অর্থাৎ, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের খসড়াটি জাতীয় সংসদে বিল আকারে উত্থাপিত হয়েছে এবং তা সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে বিল হিসেবে গৃহীত হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী উক্ত বিলটি আইন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভের অপেক্ষায় রয়েছে। রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়া গেলে বিলটি জাতীয় সংসদের একটি আইন হিসেবে গণ্য হবে এবং তা সরকারি গেজেটে ছাপানো হবে। আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা পড়ে দেখতে পারেন এখানে

 

তাছাড়া, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার সংক্রান্ত আইন পাস হয়ে গিয়েছে – এমন দাবিকে গুজব বা ভুয়া খবর আখ্যা দিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ একটি সতর্কতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। উক্ত মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে প্রকাশিত ঐ গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন প্রস্তুত ও অনুমোদন সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।” বিজ্ঞপ্তিটিতে আরও বলা হয়েছে, “আইন প্রণয়নের ঘটনা জাতীয় জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য সংবাদ, যা দেশের সকল জাতীয় গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। তাছাড়া, নতুন কোন আইন প্রণয়নের পর তা সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি পোর্টালে প্রকাশ করা হয়।”  

 

উল্লেখ্য, পূর্বেও ভূমি আইনের খসড়া প্রস্তুতিকালীন সময়ে একটি গুজব সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিলো যে, ভূমি আইন পাস হয়ে গেছে। তখন এই দাবিকে গুজব হিসেবে চিহ্নিত করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলো ভূমি মন্ত্রণালয় এবং উক্ত বিজ্ঞপ্তিকে সূত্র হিসেবে ধরে একটি ফ্যাক্ট-চেকিং রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলো ফ্যাক্টওয়াচ

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh