“ভূমি আইন” নামে নতুন কোনো আইন পাস হয় নি

Published on: January 30, 2023

সম্প্রতি “ভূমি আইন পাস ১০ই জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে” মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করা হচ্ছে ফেসবুকে। এ থেকে মনে হচ্ছে যেন “ভূমি আইন” নামে বাংলাদেশে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে ভূমি আইন পাস হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং উক্ত বিজ্ঞপ্তিটির বিপরীতে ভূমি মন্ত্রণালয় এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে একে ভুয়া খবর বা গুজব অভিহিত করে একটি সতর্কতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত উক্ত বিজ্ঞপ্তিটিকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত বিজ্ঞপ্তিটির কিছু নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

“ভূমি আইন পাস ১০ই জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে” মর্মে শেয়ার হওয়া বিজ্ঞপ্তিটির সত্যতা যাচাই করতে আমরা বিজ্ঞপ্তিটির নিচে দেওয়া “প্রচারেঃ বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন – BHRC” এর পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ নিতে গিয়ে ঐ নামের একটি ফেসবুক পেইজ এবং একটি ওয়েবসাইট এর সন্ধান পাই। তবে, ফেসবুক পেইজ বা ওয়েবসাইটের কোথাও ভূমি আইন পাস সংক্রান্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন এর সাথে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ এর কোন সম্পর্ক নেই। এছাড়াও, একটি বিজ্ঞপ্তিতে “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা” এর নাম পাওয়া যাওয়ায় তার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা ঐ নামের একটি ওয়েবসাইট খুঁজে পাই এবং সেখানেও ভূমি আইন পাস সংক্রান্ত কোন তথ্য খু্ঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, নতুন ভূমি আইন পাস হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে আমরা কিছু নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল সার্চ করি এবং বেশ কয়েকটি বাংলা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন খুঁজে পাই। উক্ত প্রতিবেদনগুলোর মারফত আমরা জানতে পেরেছি যে, ভূমি আইন সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া এবং ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে উক্ত বিজ্ঞপ্তিটিকে ভুয়া খবর এবং গুজব অভিহিত করে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কয়েকটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

ভূমি মন্ত্রণালয় এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আমরা ‘সৈয়দ মোঃ আবদুল্লাহ আল নাহিয়ান’ নামক একজন জনসংযোগ কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ “ভূমি বিষয়ক আইন সম্পর্কিত ভুয়া খবর/গুজব প্রসঙ্গে সতর্কতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি” শীর্ষক একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাই। উক্ত গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, “ভূমি আইন পাস ১০ই জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে” শীর্ষক শেয়ার হওয়া বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া খবর বা গুজব। ভূমি আইন নামক কোন আইন জাতীয় সংসদে এখন পর্যন্ত প্রণয়ন করা হয়নি। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কেবল জাতীয় সংসদের এবং আইন প্রণয়নের ঘটনা যেহেতু জাতীয় জীবনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সংবাদ, তাই দেশের সকল জাতীয় গণমাধ্যমে এটি গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয় এবং একটি নতুন আইন প্রণয়নের পর তা সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ‘ভূমি আইন’ নামক কোন আইন এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ প্রণয়ন করেনি। তবে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জমিজমা সংক্রান্ত ২৪ ধরণের অপরাধ ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার নতুন একটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করে এবং নতুন এই আইনে অপরাধের শাস্তি এবং জরিমানা ধার্যের প্রস্তাবও করা হয়। এই বিষয়ে বিবিসি বাংলা এর ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ এর একটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

অতএব, এটি স্পষ্ট যে ভূমি আইন পাস সংক্রান্ত যে বিজ্ঞপ্তিটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে তা সঠিক নয় এবং ‘ভূমি আইন’ নামক কোন আইন বাংলাদেশে এখনও প্রণয়ন হয়নি।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত বিজ্ঞপ্তিটিকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh