খালেদা জিয়া কি নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন?

Published on: September 13, 2023

সম্প্রতি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, তিনি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এর সাথে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট জুড়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর একটি বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে। যার কারণে বিভ্রান্তির তৈরি হয়েছে। নোবেল পুরষ্কার দেয়ার প্রক্রিয়ার কারণে এই মুহূর্তে এটি জানা সম্ভব না যে খালেদা জিয়া আদৌ মনোনয়ন পেয়েছেন কি না। তবে যেহেতু উক্ত দাবির সাথে এমন একটি প্রতিবেদন ব্যবহার করা হয়েছে যার সাথে ভাইরাল এই দাবির কোনো মিল নেই সেহেতু এই ধরণের ফেসবুক পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই ধরণের একটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে। (আর্কাইভ)

এসব পোস্টে বলা হচ্ছে, “অহিংস আন্দোলনের প্রতীক গণতন্ত্রের মা আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাভোগের পরও নমনীয়তায়…বিশ্ব শান্তির প্রতীক ‘নোবেল’ পুরুষ্কারের জন্য গণতন্ত্রের মা আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মনোনীত”। এ থেকে বুঝা যায় এখানে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের কথাই বলা হচ্ছে। এর সাথে “বাংলাদেশে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পাওয়ার যোগ্য খালেদা জিয়া” শিরোনামে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট যুক্ত করা হয়।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল এই দাবির প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করা হলে জানা যায়, এ বছর নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য ৩৫১ টি নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ২৫৯ জন ব্যক্তি এবং ৯২ টি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির মাধ্যমে এ বছরের অক্টোবরে এর মধ্যে একজন বিজয়ী নির্বাচন করা হবে। 

নোবেল বিজয়ী নির্বাচন করা হয় এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন এখানে

উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হচ্ছে, এই যে ৩৫১ টি নাম সেখানে মনোনীত হয়েছে এই মূহুর্তে তাদের কারোও পরিচয় জানা প্রায় অসম্ভব। নোবেল কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী ৫০ বছরের আগে এই নামগুলো প্রকাশ করা হয় না।  “ফিফটি ইয়ার সিক্রেসি রুল” এর মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হয়। অর্থ্যাৎ, এই ৩৫১ টি নামের মধ্যে খালেদা জিয়ার নাম আছে কি না সেটি এই মূহুর্তে জানা সম্ভব নয়। এটি জানতে হলে আমাদের মোটামুটি ২০৭৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি নোবেল বিজয়ী হন তবে এই বছরের অক্টোবরেই তা জানা যাবে।

এখন যদি আমরা দেখি এই মননোয়ন কিভাবে করা হয়? অর্থ্যাৎ, এই নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য যে আবেদন করবে সে কিভাবে করবে?

নোবেল ফাউন্ডেশনের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি নিজেকে মনোনীত করতে পারবে না। নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করতে পারবে। কে মনোনয়ন করতে পারবে তার জন্য একটি মানদন্ড রয়েছে। নিম্নোক্ত এই মানদন্ডগুলোর মধ্যে যে কেউ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করতে পারেন। অর্থ্যাৎ, এর মধ্যে কেউ যদি খালেদা জিয়াকে মনোনীত করতে চায় সেক্ষেত্রে করতে পারেন।

এছাড়া নোবেল পুরষ্কারের জন্য খালেদা জিয়া যোগ্য কি না জানতে অনুসন্ধান করা হলে জানা যায়, যেকোনো জীবিত ব্যক্তি এই পুরষ্কারের জন্য যোগ্য প্রার্থী।

অতএব, বিষয়টি এরকম যে, মনোনয়ন করার জন্য যোগ্য ব্যক্তি যদি খালেদা জিয়াকে মনোনীত করতে চায় তবে সে করতে পারবে। কিন্তু যেহেতু এই তথ্যগুলো নোবেল কর্তৃপক্ষ গোপন রাখে তাই এটি এই মূহুর্তে জানা অসম্ভব। তাই নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য খালেদা জিয়া মনোনীত হয়েছেন কি না সেটি যাচাই করা সম্ভব নয়। যে কেউ এই দাবি করতে পারে যে সে মনোনীত হয়েছে কিন্তু সেটি ৫০ বছরের আগে যাচাই করা প্রায় অসম্ভব।

কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ভাইরাল এই দাবির সাথে দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রতিবেদন জুড়ে দেয়া হয়েছে। যা দেখে এটি প্রতীয়মান হয় যে, যুগান্তরের প্রতিবেদনটির ভিত্তিতেই এই দাবিটি করা হচ্ছে। কিন্তু মূল প্রতিবেদনটি পড়ে জানা যায় যে, যুগান্তরের এই শিরোনামটি কোনো ফ্যাক্ট না বরং একটি মতামত। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এই মতামতটি দিয়েছিলেন। তিনি মনে করেন, ‘খালেদা জিয়া বিএনপির দ্বিতীয় পিলার। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে যদি কেউ নোবেল পায় সেটা খালেদা জিয়া পাওয়ার যোগ্য।’ শিরোনামে শুধু এই বক্তব্যটি থাকায় অনেকেই ভেবে নিয়েছেন যে যুগান্তর এই দাবিটি করছে। শিরোনামে থাকা উদ্ধৃতি চিহ্নটি অনেকেই হয়তো খেয়াল করেন নি। এই ধরণের অনেক ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যাচ্ছে যেখানে উক্ত উদ্ধৃতির সাথে যুগান্তরের নাম দিয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থ্যাৎ, তারা বলতে চাচ্ছেন এটি যুগান্তরের একটি ভাষ্য।

ভাইরাল এই ভিত্তিহীন দাবির সাথে যুগান্তরের এই প্রতিবেদনটি জুড়ে দেওয়ার কারণে নিশ্চিতভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, অনেকেই এই প্রতিবেদনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। তাই মূল দাবিটি অযাচাইযোগ্য হলেও এর সাথে যুগান্তরের প্রতিবেদন জুড়ে দেয়ার কারণে সেটি এক ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি করছে।

তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় উক্ত ছবিসহ দাবিটিকে একসাথে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করা হচ্ছে।

অতীতে নোবেল পুরষ্কার নিয়ে ভাইরাল কিছু গুজব নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের কিছু প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে এবং এখানে

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh