নির্বাচন “সুষ্ঠু না হওয়ায়” ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র?

Published on: January 9, 2024

যা দাবি করা হয়েছেঃ ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠ না হওয়ায় মার্কিন ভিসানীতিতে ৩০০ এমপি, মন্ত্রীকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ ৩০০ এমপি, মন্ত্রীকে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং গুয়েতেমালার। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠ না হওয়ায় ৩০০ এমপি, মন্ত্রীকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে  এমন সংবাদ কোথাও পাওয়া যায়নি। গত ২২ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী’ ব্যক্তিবর্গের উপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগ করার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেও তখন কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেনি। সেপ্টেম্বরের সেই পুরনো প্রতিবেদনগুলো সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ

৭ই জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে রাত ৮ টা ৪৭ মিনিটে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা BNP নামক পেজে   ২.১১ মিনিটের একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। ভিডিওর ক্যাপশন ছিল,

মার্কিন ভিসানীতি ৩০০ এমপি মন্ত্রীর সেনশনের তালিকা প্রকাশ করা শুরু হয়েছে /মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশকে বলে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি তাই ভিসানীতি করা হয়েছে/

#7januarynovote

#ডামিনির্বাচন #DummyElection

#নির্বাচন #ভজন

#FreeDemocracy

#StepDownHasina

ভিডিওর বিষয়বস্তু হিসেবে যে স্ক্রিপ্ট পাঠ করা হয়, তাঁর  সাথে দৈনিক কালের কণ্ঠ এর পুরনো  একটি প্রতিবেদন হুবহু মিলে যায় । ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত কালের কণ্ঠ এর উক্ত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো ‘বাংলাদেশে মার্কিন ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু’।

প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে

একই দিন একই পেজ থেকে রাত ১০ঃ৩০ মিনিটে একই ক্যাপশনে আরেকটা পোস্ট আপলোড করা হয়। ৩.০৪ মিনিটের সেই ভিডিওটি নাগরিক টিভির পুরনো একটি প্রতিবেদনের সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়।    নাগরিক টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ৩.০৩ মিনিটের উক্ত প্রতিবেদনটি আপলোড করা হয়েছিল ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে ইউটিউবে নাগরিক টিভির উক্ত খবরের শিরোনাম ছিলো ‘বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের।’

অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে কালেরকণ্ঠ এবং নাগরিক টিভির খবর একই দিনে প্রকাশ পেয়েছে এবং দুইটি খবরের বাংলাদেশিদের উপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের নীতির ব্যাপারে আলোকপাত করছে। উক্ত খবরগুলো থেকে জানা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ কারণে  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলেন ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য রয়েছেন।’

ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতি ইউএস এম্বাসি বাংলাদেশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। বিবৃতিটি ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখেই প্রকাশ করা হয়।

অতএব ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে বাংলাদেশে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবরটি সত্য। তবে এটা বর্তমান সময়ের নয়। এই ভিসা নীতি আরোপ করা হয়েছিলো ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে। তবে এই ভিসা নীতি আরোপ করার সময় ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেছিলেন।

তাছাড়া বিবিসি নিউজ বাংলার প্রকাশিত ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকায়  র‍্যাবের র‍্যাবের ছয় সদস্যকে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিলো।

এছাড়া ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে,  ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ট্রেজারি। তবে সেই তালিকায় বাংলাদেশ ছিলনা।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষত ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের পরে বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো ভিসা নিষেধাজ্ঞার সংবাদ কোথাও পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ৮ই জানুয়ারির তারিখ সম্বলিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেখা যাচ্ছে, যেখানে এই নির্বাচন অবাধ, বা সুষ্ঠু ছিল না বলে দাবি করা হলেও নিষেধাজ্ঞার কোনো বার্তা ছিলনা।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে,  মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়েতেমালার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনে বাধাগ্রস্ত করায় গত ১২ই ডিসেম্বর ,২০২৩ তারিখে ১০০ জন কংগ্রেস সদস্যসহ প্রায় ৩০০ জন গুয়েতামালার নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই ৩০০ জনের ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরটিকে বাংলাদেশের বলে দাবি করে অতীতে গুজব ছড়িয়েছিল।  এ বিষয়ে ফ্যাক্টওয়াচের পুরনো প্রতিবেদন দেখুন এখানে-  ৩০০ জনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরটি বাংলাদেশের নয়

অতএব সার্বিক দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রতিক পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh