প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে হত্যা শিরোনামে বিভ্রান্তিকর ভিডিও

Published on: July 13, 2023

সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করলো তার দেহরক্ষী’ শিরোনামে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। মূল ভিডিও অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, সেখানে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই তথ্যটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, এটিকে  বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। এছাড়াও ভিডিওতে ব্যবহৃত একটি ছবিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির কথাও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এটিও তিন বছর পুরনো একটি খবর। এই দুইটি তথ্য একসাথে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে সাধারন নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা খবরটিকে বাংলাদেশের বলেই মনে করছেন। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন একটি ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 

ভিডিওটি দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

 

 

প্রায় দশ মিনিট দীর্ঘ এই ভিডিওর শিরোনামএইমাত্রঃ ২ দেহরক্ষীর গুলিতে ঝাঝড়া প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সম্প্রতি আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে খবরটি সাজানো হয়। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর তথ্য দিয়ে ভিডিওটি শেষ করা হয়। এছাড়া একটি ভিডিওতে এমন একটি থাম্বনেইল ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে, খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

 

ভিডিওটির শিরোনাম লক্ষ্য করলে দেখা যাবে,  সেখানে এইমাত্র পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দাবি করা হচ্ছে, দেহরক্ষীর গুলিতে প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু। এছাড়া ভিডিওতে ব্যবহৃত নিম্নোক্ত থাম্বনেইলটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেখানে বাংলাদেশ সম্পৃক্ত কিছু ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওগুলোর মধ্যে একটিতে খুব ছোট করে উল্লেখ করা হয়েছে যে “ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেটি এতটাই ছোট যে, খুব ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে দেখা যায় না। এছাড়া অন্য ভিডিওগুলোতে সেটিও খুঁজে পাওয়া যায় নি।

 

 

এর সাথে সম্পূরক আরেকটি দাবি করা হচ্ছে যে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

 

 অর্থ্যাৎ, ভিডিওটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে করে এটি প্রতীয়মান হয় যে, ঘটনাটি বাংলাদেশের। অন্যদিকে, উক্ত ভিডিওতে নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে, অনেকেই খবরটিকে বাংলাদেশের খবর বলেই ধরে নিয়েছেন এবং কেউ কেউ ঘটনার সত্যতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এমন কিছু প্রতিক্রিয়া দেখুন নিচের এই ছবিতেঃ



 



 

কিন্তু দীর্ঘ এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখলে বুঝা যায়, একদম শেষের দিকে উক্ত ঘটনাটি ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়। উল্লখ্য, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু হয় ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর। সেসময় তার দুই দেহরক্ষীর মাধ্যমে তাকে খুন করা হয়।

 

অর্থ্যাৎ, ৩৯ বছর পুরনো একটি ঘটনাকে এইমাত্র পাওয়া খবর বলে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

 

অন্যদিকে, ভিডিওর থাম্বনেইলে থাকা দ্বিতীয় দাবিতে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলা হলেও নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। বরং, অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, ২৪ মার্চ, ২০২০ এ সময় টিভি প্রকাশিত একটি নিউজের থাম্বনেইলটি কেটে এখানে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

মূল খবরে বলা হয়েছে, তার শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে তার দন্ডাদেশ স্থগিত রেখে সেসময় তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিলো। অর্থ্যাৎ, তিন বছর পুরনো একটি খবরকে এইমাত্র পাওয়া খবর বলে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ৫ বছরের কারাদন্ড হয়।

 

তাই বিষয়টি পরিষ্কার যে, ভিডিওর শিরোনাম এবং এর থাম্বনেইলে ব্যবহৃত দাবিগুলোর এমন উপস্থাপন মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন ক্যাপশনসহ ভিডিওটিকে বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করছে।

 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh