নারীর গর্ভ থেকে সাপের বাচ্চা জন্মানোর ভিডিওটি ভূয়া

Published on: July 13, 2023

সাম্প্রতিক সময়ে “মানুষের পেটে সাপের বাচ্চা” শীর্ষক এক প্রকার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওগুলোতে দাবি করা হচ্ছে ভারতের মুম্বাইয়ে অথবা ঝাড়খন্ডে বসবাসরত একটি নারীর গর্ভ থেকে সাপের বাচ্চা জন্মগ্রহণ করেছে। তবে এই দাবির সপক্ষে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ এসব ভিডিওতে উপস্থাপন করা হয়নি। ফেসবুকের বাইরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া তাত্ত্বিকভাবে মানুষের গর্ভে সম্পূর্ণ আলাদা প্রজাতির একটি প্রাণী (সাপ) এর জন্মাবার  সম্ভাবনা নেই। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

 

গুজবের উৎস

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিও দেখতে পারেন এখানে, এখানে,এখানে এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে


 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোকে যথেচ্ছভাবে এডিট করে প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিটি ভিডিওতেই তথ্যের গড়মিল ও অবাস্তবতা দেখা যায়। কিছু কিছু ভিডিওতে দাবি করা হয়, ভারতের মুম্বাইয়ে মহিলার পেটে সাপের বাচ্চা জন্মানোর ঘটনাটি ঘটেছে । এটি তার স্বামী ছাড়া আর কেউ জানত না। কারণ অন্য হাসপাতাল থেকে সন্দেহ করার পর ই তাকে মুম্বাইয়ের হসপিটালে আনা হয়।

 

অপরদিকে Md Akib নামক পেইজটিতে দাবি করা হয় ঘটনাটি ব্যাঙ্গালোরের।

এদিকে Adi Misti Khor নামক পেইজটি বলছে ঘটনাটি ঝাড়খন্ডের।

শুধু তাই নয় ভিডিওগুলোতে এও বলা হয় মহিলার স্বামী আগে থেকেই জানতেন তার স্ত্রীর পেটে সাপ রয়েছে। কারণ তাকে ঝাড়খন্ডের একটি হাসপাতালে নেওয়ার পরই সেখানকার ডাক্তার জানিয়েছিলেন যে, ডাক্তারের নাকি সন্দেহ হচ্ছে তার স্ত্রীর পেটে একটি সাপের বাচ্চা রয়েছে এবং সেজন্য তাকে বড় কোনো হাসপাতালে নেয়া উচিত।

 

কোনো কোনো ভিডিওতে আলিগড়ের ইটা জেলার জনৈক  ডাক্তার শৈলেন্দ্র জৈন এর নামটা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ভারতীয় হিন্দিভাষী সংবাদমাধ্যম amarujala.com এই ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছে, তিনি এমন কোনো রোগীর সার্জারি করেননি। বরং ডা শৈলেন্দ্র জানাচ্ছেন, আলট্রাসনোগ্রাম এর ছবিতে কোনো সাপ দেখা যাচ্ছে না। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সম্ভবত ভুল এ্যাঙ্গেল থেকে ছবিটা দেখছে।

ভাইরাল ভিডিওতে একটি সার্জারির অংশবিশেষ দেখা যায়, যেখানে বেশ কিছু ডাক্তার/সার্জন/ শিক্ষানবিশ ডাক্তাররা অপারেশন থিয়েটার এর এপ্রন গায়ে চড়িয়ে স্ক্রিনে একটি অপারেশনের দৃশ্য দেখছেন । এই ভিডিওটি টিকটকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে, যে ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, Art Conference SDS Pakistan Surgeon Society

অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত হওয়া গেল যে অপারেশনের এই ঘটনাটি ভারতের নয় , বরং পাকিস্তানের, এবং এখানে সর্প-সন্তান প্রসবের মত কোনো ঘটনা ঘটছে না।

কয়েকটি ভিডিওতে আবার দাবি করা হচ্ছে, সদ্য প্রসূত সাপের বাচ্চার ওজন ৩.৫ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত।

অথচ সাপের বাচ্চার সর্বোচ্চ ওজন সম্পর্কে খোঁজ নিলে দেখা যাচ্ছে, python hatchlings প্রজাতির সাপের বাচ্চা সর্বোচ্চ ১১০- ১৭০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।

বিষয়টা নিয়ে ভারতের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা factly ইতিমধ্যে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা জানাচ্ছে, মানুষ এবং সাপ সম্পূর্ণ ভিন্ন বর্গের প্রাণী। মানুষ সন্তান প্রসব করে, অন্যদিকে সাপ ডিম পাড়ে। এদের প্রজনন পদ্ধতি একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে মানুষের গর্ভে মানবসন্তান ব্যতীত সাপ বাঁ অন্য কোনো প্রাণীর জন্ম হওয়া বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব।

সম্প্রতি ভারতের অজ্ঞাত কোনো হাসপাতালে সর্প প্রসবের ঘটনাকেও তারা গুজব হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

উল্লেখ্য, এ ধরনের গুজব আগেও ভাইরাল হয়েছিল । ২০১৭ সালের মানুষের পেটে সাপ এর একটি এক্সরে ফিল্মের ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল । স্নোপস এর অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি এডিট করা ফটো ছিল।

২০১২ সালে ইন্দোনেশিয়ার এক মা একটি গিরগিটি সন্তান প্রসব করেছেন মর্মে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, ওই নারী  Pseudocyesis বাঁ ছদ্ম গর্ভাবস্থায় ভুগেছিলেন, এবং কথিত ‘প্রসব’ এর মুহুর্তে একটি গিরগিটি সেখানে হাজির হয়েছিল। ফলে ভুলভাবে ওই গিরগিটিকে সদ্য প্রসূত গিরগিটি ভেবে ভুল করছেন স্থানীয়রা। এ প্রসঙ্গে IBTimes এর প্রতিবেদন দেখতে পাবেন এখানে ।

সারমর্ম

মানব মাতার গর্ভে ভিন্ন প্রজাতির সন্তানের মিথ দীর্ঘদিন ধরেই সমাজে প্রচলিত। অনেক রুপকথাতেও এমন গল্প দেখতে পাওয়া যায়। তবে এসব গল্পের কখনো কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বৈজ্ঞানিকভাবেও এমন ঘটনা ঘটনা সম্ভব না। সম্প্রতি, ভারতে এক মায়ের সাপের বাচ্চা প্রসবের যে গুজব ভাইরাল হয়েছে, তাঁর সপক্ষেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরে মূলধারার গণমাধ্যমেও এমন কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই সবদিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh