চাইনিজ গানকে পাখির কণ্ঠে কোরআন পাঠের শব্দ বলে দাবি

Published on: March 30, 2024

যা দাবি করা হচ্ছেঃ এটা পাখির  কন্ঠে কোরআন পাঠের দৃশ্যকে সাংবাদিক ক্যামেরায় ধারণ করার ভিডিও।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ ভিডিওটি বিকৃত। মূল ভিডিওতে স্পষ্ট দৃশ্যমান কোনো পাখি ছিল না। এডিট করে সেখানে একটি পাখি বসিয়ে দিয়ে বিকৃত করা হয়েছে। তাছাড়া, ব্যাকগ্রাউন্ডে যেই শব্দ শোনা যাচ্ছে তার সাথে কোরআন পাঠের কোনো ভাবেই মিল পাওয়া যায়না। ব্যাকগ্রাউন্ডের শব্দটি মূলত “Thrush Trapped in the Octagonal Cage” (〈畫眉困在八角籠〉) নামক একটি গানের অনলাইন সাউন্ড এডিটিং সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে করা রিমেক ভার্সন।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ 

ভাইরাল ভিডিওটি সত্যিই পাখির  কন্ঠে কোরআন পাঠের দৃশ্য কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। শুরুতেই ভিডিওতে বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে যেই শব্দ শোনা যাচ্ছে তার সাথে কোরআন পাঠের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপরে ভিডিওর ১২ থেকে ১৩ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, হঠাৎ করে একটি পাখিটি ডাল এবং পাতার মধ্যে থেকে দৃশ্যমান হচ্ছে। ১২ সেকেন্ডের সময় সেখানে কোনো পাখি ছিলোনা কিন্তু ১২ থেকে ১৩ সেকেন্ডে যাওয়ার সময় একটি পাখি সেখানে অস্বভাবিক ভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। তাছাড়া, এই পাখিটি আসার পরে তার চারপাশে থাকা গাছের ডাল এবং পাতাগুলো ঝাপসা হয়ে যেতে দেখা যায়।

এ পর্যায়ে ভিডিওটির উৎস খুঁজে পাওয়ার জন্য এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে চীনের পিপলস ডেইলি ডিজিটাল কমিউনিকেশন কোং লিমিটেডের অফিসিয়াল ওয়েইবো অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা ভাইরাল ভিডিওটির পূর্ব সংস্করণের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওয়েইবো (Weibo) হচ্ছে চীনা মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইট। সেখানে মূল দৃশ্যগুলো ভাইরাল ভিডিওগুলোর মতই।  কিন্তু, সেখানে অনেক পাখির কিচির মিচির থাকলেও স্পষ্ট কোনো পাখি বা গান নেই৷ মূল ভিডিওতে আরও উল্লেখ করে হয় যে, দৃশ্যটি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেংদু শহরের একটি পার্ক থেকে ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়াও এই ওয়েইবো অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে ‘হোয়াইট ডিয়ার ভিডিও’ নামের অন্য একটি ওয়েইবো অ্যাকাউন্টের লিংক খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে প্রবেশ করেও এই একই ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওর বর্ণনায় উল্লেখ করা হয় যে, পাখিদের আকৃষ্ট করার জন্য গাছের ডালে পাখির ডাকের অডিও রেকর্ড করা স্পিকার ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল।  ষাট বা সত্তর জন লোক পাখির ছবি তোলার জন্য গাছের দিকে ক্যামেরা তাক করিয়ে ছিল এবং শত শত লোক তা দেখছিল। ‘জনাব লি’ নামের একজন পথচারী এই দৃশ্য ধারণ করেছিলেন।

চাইনিজ ভাষায়ও ভিন্ন দাবিতে এই ভিডিওটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভাইরাল হয়ে আসছে যেখানে ভাইরাল পাখিটিকে একই সুরে গান গাইতে দেখা যায়। সেখানে দাবি করা হচ্ছিল যে, ভিডিওটি বেইজিং কনজারভেটরি অফ মিউজিক দ্বারা প্রশিক্ষিত একটি পাখির গান গাওয়ার সময়কার। তাইওয়ান ফ্যাক্ট চেকিং সেন্টার এ ব্যাপারে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেখানে তারা উল্লেখ করেছে ভিডিওটি  চীনের সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেংদু শহরের হুয়ানহুয়াক্সি পার্কে ধারণ করা হয়েছিল। পার্কটি পাখি দেখার জন্য বিখ্যাত  একটি জায়গা, যেখানে পাখি-প্রেমীরা প্রায়ই ছবি তুলতে যান৷

অন্যদিকে, আলোচিত ভিডিওতে পাখির গান আসলে কী সে সম্পর্কেও এই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা দেয়া আছে। সেখানে বলা হয়, পাখির গান দাবিতে ব্যাকগ্রাউন্ডে যেই শব্দ শোনা যাচ্ছে সেটা মূলত  “Thrush Trapped in the Octagonal Cage” (〈畫眉困在八角籠〉) নামক একটি গানের অংশ। সাউন্ড এডিটিং সফ্টওয়্যার এর মাধ্যমে গানটির ভয়েস পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে আরও উল্লেখ করা হয় মাই এডিট নামের একটি অনলাইন সাউন্ড এডিটিং সফ্টওয়্যারে গানটি আপলোড করে সেখানে ” চিপমঙ্ক ” প্রিসেট গ্রুপ মোড ব্যবহার করে এবং ১৫-এ পিচ সামঞ্জস্য করে ভাইরাল ভিডিওর মতো গানের শব্দ তৈরি করা সম্ভব।

তাইওয়ান ফ্যাক্ট চেকিং সেন্টারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করে Trapped in the Octagonal Cage” (〈畫眉困在八角籠〉) নামক গানটির একটি লিংক সংগ্রহ করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম।

এরপর, গানটি মাই এডিট সফ্টওয়্যারে দিয়ে ভাইরাল গানটির মত রিমেক করার চেষ্টা করা হয়। রিমেক করা গানটি শুনুন এখানে

দেখা যাচ্ছে যে, ভাইরাল ভিডিওতে কোরআন পাঠের কোনো শব্দ ছিলো না এবং পাখিটিকেও এডিট করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।  সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল ভিডিওটি বিকৃত।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh