সজীব ওয়াজেদ জয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী?

Published on: September 25, 2023

“সজীব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় বন্দী (হিডেন অ্যারেস্ট) হয়েছেন এবং তার সম্পদও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সম্পদের পরিমান প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার” – এ বার্তা নিয়ে একটি পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাই করে দেখেছে যে, এমন দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ কোথাও প্রকাশিত হয়নি। সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী হবার বিষয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বক্তব্য কোথাও প্রকাশ হয়নি। সরকার বা বিরোধী দলের তরফেও এমন কোনো দাবি পাওয়া যায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনী কাঠামোতে “হিডেন অ্যারেস্ট” নামক কোনো গ্রেপ্তারের অস্তিত্ব খুঁজে পায় নি ফ্যাক্টওয়াচ। সে কারণে এমন দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।   

এমন পোস্টের কিছু নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ভাইরাল পোস্টটির উৎপত্তি জানতে ফেসবুকে একাধিক কি ওয়ার্ড ধরে সার্চ করা হয়। সেখান থেকে Muhammad Wahid Un Nabi নামের একটি ভ্যারিফাইড ফেসবুক একাউন্ট পাওয়া যায়। মূলত এই একাউন্ট থেকে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তাঁর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় বন্দী (হিডেন অ্যারেস্ট) এবং তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে — এমন দাবিতে পোস্টটি করা হয়েছে। অবশ্য এই পোস্টদাতা এটাও উল্লেখ করেছেন যে, “এমন দাবির স্বপক্ষে কোনো লিংক নেই। এটাকে গুজব হিসেবে  ধরে নেওয়া যেতে পারে।  আজকের গুজব ০২/০৩ সপ্তাহ কিংবা মাস ও লাগে সত্যি হইতে”।

কিন্তু এই ডিসক্লেইমার ছাড়াই উক্ত পোস্টটি পরবর্তীতে ফেসবুকে দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। Muhammad Wahid Un Nabi একাউন্টকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মূল পোস্টদাতা যেখানে নিজেই দাবিটিকে গুজব হিসেবে দেখতে বলেছেন। তার কাছে এমন দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই তাও উল্লেখ করেছেন। সেক্ষেত্রে দাবিটি যে ভিত্তিহীন তা সহজেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে।

বলাবাহুল্য, ভাইরাল পোস্টটিতে এই বিষয়টিও উল্লেখ আছে যে, সজিব ওয়াজেদ জয় আমেরিকায় “হিডেন অ্যারেস্ট” হয়েছেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে চতুর্থ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে  সরকার কর্তৃক অযৌক্তিক অনুসন্ধান এবং কোনো কিছু জব্দ করা থেকে জন সুরক্ষা আইন রয়েছে। বিচারকের লিখিত অনুমতি এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি করা আইনত অবৈধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।  তবে কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনি এ সমস্ত প্রমাণ ছাড়াও তল্লাশি করার অধিকার রাখে। আটক বা গ্রেপ্তার হয়রানির বিপরীতে কোন  আইন জনগণকে সুরক্ষা প্রদান করে তা জানুন এখানে।  যুক্তরাষ্ট্রের আইনের ধারাসমূহ বিশ্লেষণ করে “হিডেন অ্যারেস্ট” জাতীয় কোনো আইনের ধারা দেখা যায়নি।

সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে থেকে এ জাতীয় কোনো বার্তা প্রকাশিত হয়েছে কিনা, অতীতে যুক্তরাষ্ট্রে তার কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে কিনা জানতে গুগলে একাধিক কি ওয়ার্ড ধরে সার্চ করা হয়। তবে ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে সেখান থেকেও কোনো বার্তা প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি। অর্থাৎ অনুসন্ধানে তাকে গ্রেপ্তার করার মতো কোনো কারণ এখনো দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গগত যে, চার মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপরে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল। সে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানুন এখানে। শুক্রবার থেকে এই ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তার বিবৃতিতে উঠে এসেছে যে ভিসা নীতির আওতায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন। এছাড়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী বা জড়িত হিসেবে প্রমাণিত অন্য ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন বলে উঠে এসেছে খবরে। পাশাপাশি, ভিসা নীতির আওতায় থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন। বিস্তারিত জানুন এখানে।

ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণার পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমার ছেলেও এখানে আছে। সে ব্যবসা–বাণিজ্য করছে, বিয়ে করেছে, তার মেয়ে আছে, সম্পত্তি আছে, বাড়ি–ঘর আছে। যদি বাতিল করে, করবে। তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের বাংলাদেশতো আছেই”। বিস্তারিত জানুন এখানে

এমন বক্তব্যের পরেই জয়ের গ্রেপ্তারের দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর উক্ত বক্তব্য থেকে এটি প্রমাণিত হয়নি যে জয় ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন।

বলাবাহুল্য, জয়কে নিয়ে আগেও গুজব ছড়িয়েছে। এবিষয়ে ফ্যাক্টওয়াচের একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে

যথার্থ কারণে সজীব ওয়াজেদ জয়ের গ্রেপ্তার বা “হিডেন অ্যারেস্ট” এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত বিষয়ক সকল দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh