তুরষ্কের রাস্তায় সিরিয়ার একটি শিশুর কান্নার পুরনো ভিডিও ভাইরাল।

Published on: November 17, 2021

সম্প্রতি তুরস্কের রাস্তায় সিরিয়ার একটি শিশুর কান্নার ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওর শিরোনামে রান্তায় টিস্যু পেপার বিক্রি করা শিশুটির মা সিরিয়ার বোমা হামলায় ধ্বংসস্তুপে হারিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায় শিশুটি একজন মহিলাকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মূল ভিডিওটি ৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে “IHH” নামে তুরস্কের একটি এনজিও-র ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা হয়েছিলো এবং সেখানে বাচ্চার কান্নার কারণ হিসেবে “সামরিক পোশাকের” প্রতি সিরিয়ার বাচ্চাদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করা হয়। বিবিসির একটি প্রতিবেদন বিষয়টি নিশ্চিত করে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ অসংগতিপূর্ণ শিরোনামে কমপক্ষে ৬ বছর পুরনো এই ভিডিওকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 

ফেসবুকে ভাইরাল কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে



এসব পোস্টের শিরোনামে লেখা আছে,” সিরিয়ার একটি বাচ্চা শিশু তুরস্কের রাস্তায় টিসু বিক্রি করছিল; তখন একজন মহিলাকে তার মায়ের মত দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে দেখা গেল। তার মা সিরিয়ার বোমার আঘাতে ধংস স্তুপে হারিয়ে গেছে“। প্রায় তিন মিনিট লম্বা এই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাচ্চা কান্না করছে এবং তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন পাশে থাকা অনেকেই। পরবর্তীতে শিশুটিকে গাড়িতে করে একটি বাসায় নিয়ে যেতে দেখা যায়।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভিডিওতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কি-ওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করে ইউটিউবে সার্চ করা হলে ০৭ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত এই ভিডিওটি সামনে আসে। পরবর্তীতে ইউটিউবের এই ভিডিওতে ব্যবহৃত কিছু ইংরেজি কি-ওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করে গুগল সার্চ করা হলে “The stories of Syrian children that went viral in 2015” শিরোনামে ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখের বিবিসির একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি মূলত ২০১৫ সালে ভাইরাল হওয়া সিরিয়ান শিশুদের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তৈরি। সেই প্রতিবেদনের “The girl who’s frightened of men in uniform” শিরোনামে যে শিশুটির কথা বলা হয় সেই শিশুটিই হচ্ছে বর্তমানে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই শিশু। সেখানে, “IHH” নামক তুরস্কের একটি এনজিও-র ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত একটির ভিডিওর উল্লেখ করে বলা হয়, “ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মেয়েটি যখন রাস্তায় টিস্যু বিক্রি করার জন্য বিপদে পড়বে ভেবে উদ্বেগ প্রকাশ করছে তখন তুরষ্কের একজন পুলিশ সদস্য বাচ্চাটির কান্না থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।” প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে মেয়েটির নাম আয়শা ও তার বয়স ২০১৫ সালে ছিলো ৫ বছর  এবং এই ঘটনার পর তাকে তার পরিবারের কাছে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হয়।


“IHH” নামক এনজিও-র প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত ওই ভিডিওর শিরোনামটি গুগল ট্রান্সলেটররের মাধ্যমে অনুবাদ করলে দেখা যায় সেখানে বলা হচ্ছে, মূলত সামরিক পোশাকের প্রতি সিরিয়ার শিশুদের একধরনের ভয় জন্ম নিয়েছে এবং তারই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে শিশুটির এমন আচরণ।

কিন্তু বিবিসির প্রতিবেদন কিংবা “IHH” থেকে প্রকাশিত ভিডিওটির বিবরণ কোথাওই এমন দাবি করা হয়নি যে বাচ্চাটির মা সিরিয়ার বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তুপে হারিয়ে গিয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানেও তার পরিবার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি।

 

উপরোল্লিখিত তথ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, ১) ভিডিওটি আজ থেকে কমপক্ষে ৬ বছর পুরনো। ২) বর্তমানে ভাইরাল ভিডিওটির শিরোনামে এক মহিলাকে মায়ের মত দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে বাচ্চাটি বলে যে দাবিটি করা হয়েছে সেটি সঠিক নয়। মূলত সামরিক বাহিনি বা পুলিশের পোশাকের প্রতি এক ধরনের ভয় থেকে বাচ্চাটি কান্না করেছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভুল শিরোনামে প্রকাশিত পুরনো এই ভিডিওটিকে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply