Published on: November 8, 2023
![]() যা ঘটেছে: বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘আজকের পত্রিকা’ কর্তৃক প্রকাশিত “১২ দেশে বাংলাদেশের পোশাক প্রত্যাহার” শীর্ষক শিরোনাম সংবলিত সংবাদে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এর একটি তালিকাকে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১২টি দেশ তাঁদের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিক্রি বন্ধ এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্য ফেরত নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ওইসিডি এর উক্ত তালিকা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন গার্মেন্টসে তৈরিকৃত বিভিন্ন ধরনের পোশাকে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আছে – এই মর্মে পোশাকগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশের দশটি নমুনা পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, ওইসিডি প্রত্যাহারকৃত পণ্যের তালিকা তৈরি করতে বিভিন্ন দেশের পণ্যমান নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করে। অর্থাৎ, ‘পোশাক রপ্তানি’ প্রত্যাহার করা হয়নি। বরং ‘রপ্তানিকৃত কিছু পোশাকে’ স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় শুধুমাত্র সেগুলোই বাজার থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতএব, ১২টি দেশ কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি [আমদানি] প্রত্যাহার করার দাবিটি সঠিক নয়। মূলত, আজকের পত্রিকার সংবাদ শিরোনামটি জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে। |
আজকের পত্রিকা এর প্রকাশিত সংবাদটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ ১ ২)।
এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
Image: Example of a misleading Facebook post
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোতে উত্থাপিত দাবিটির যথাযথতা যাচাই করতে আমরা প্রাসঙ্গিক কিছু কি–ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল সার্চ করি। আমাদের অনুসন্ধানে আজকের পত্রিকা কর্তৃক প্রকাশিত “১২ দেশে বাংলাদেশের পোশাক প্রত্যাহার” শিরোনাম সংবলিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে, আজকের পত্রিকা–র ওয়েবসাইটে গিয়ে সংবাদটি খুঁজে পাওয়া না গেলেও তাদের ই–পেপার ভার্সনে মূল সংবাদটির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে উক্ত সংবাদটি পড়ে দেখা গেছে তারা পণ্য প্রত্যাহার করার গ্লোবাল প্লাটফর্ম হিসেবে পরিচিত অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এর একটি তালিকাকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করে এই মর্মে সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালিসহ ১২টি দেশ তাদের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিক্রি বন্ধ এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে বিক্রীত পোশাক ফেরত নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ওইসিডি এর ঐ তালিকায় কানাডার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, গত ৪ অক্টোবর ২০২৩ এ কানাডার সরকারি ওয়েবসাইটে জর্জ ব্র্যান্ডের রাত্রিকালীন পোশাকের কিছু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে সেগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে এবং ইতিমধ্যে বিক্রীত পোশাকগুলো ফেরত দিতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিলো। উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি থেকে আরও জানা গেছে যে, জর্জ ব্র্যান্ডের রাত্রিকালীন পোশাকটি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের “ইউনিক ডিজাইনারস লিমিটেড” নামক একটি পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠানে।
Image: Excerpt from the official website of the Canadian Government
ওইসিডি এর ঐ তালিকাটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন গার্মেন্টসে বানানো বেশ কিছু ধরনের পোশাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে বিবেচনায় সেগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহার, বিক্রি, এবং বিক্রীত পোশাক গ্রাহকদের কাছ থেকে ফেরত নেয়ার নির্দেশের দশটি নমুনা রয়েছে। ওইসিডি এর তালিকা থেকে যে দেশগুলোর নাম জানা গেছে সেগুলো হলো: স্লোভাকিয়া, লিথুয়ানিয়া, বুলগেরিয়া, ইতালি, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, এবং সাইপ্রাস। উল্লেখ্য যে, পণ্য প্রত্যাহার করার গ্লোবাল প্লাটফর্ম পরিচালনাকারী হিসেবে পরিচিত ওইসিডি বিভিন্ন দেশের পণ্যমান নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বা সংস্থাগুলোর হুঁশিয়ারি কিংবা সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করে প্রত্যাহারকৃত পণ্যের তালিকা প্রস্তুত করে। উদাহরণস্বরূপ, গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ ওইসিডি এর পণ্য প্রত্যাহারের তালিকায় যুক্ত হয় টার্টেলডোব লন্ডন নামক একটি ব্র্যান্ডের বাংলাদেশে তৈরিকৃত বাচ্চাদের পায়জামা। ঐ পায়জামাগুলোতে ব্যবহৃত ধাতুর তৈরি ছোট বোতাম শিশুরা গিলে ফেলতে পারে এবং সেগুলো তাদের শ্বাসরোধ করতে পারে – এই ঝুঁকি আছে বিধায় ইউরোপিয়ান কমিশন একটি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলো (রেফারেন্স নাম্বার: A12/02284/23)। অর্থাৎ, ইউরোপিয়ান কমিশন এর হুঁশিয়ারিকে আমলে নিয়ে ওইসিডি টার্টেলডোব লন্ডন ব্র্যান্ডের পোশাকটি তাদের প্রত্যাহারকৃত পণ্যের তালিকায় যোগ করেছে।
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ১২টি দেশ বাংলাদেশের ‘পোশাক রপ্তানি’ প্রত্যাহার করেনি। বরং বিভিন্ন দেশে ‘রপ্তানিকৃত বাংলাদেশের কিছু পোশাকে’ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকায় কেবল সেগুলোই বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
|