১১.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হবার দাবিটি সত্য নয়

Published on: November 8, 2023

যা দাবি করা হয়েছে: ১১.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছে। যার ফলে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে: দাবিটি মিথ্যা। মূলত ভাইরাল ভিডিওটি ২০১৫ সালের। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিপুরেশ্বর চক অঞ্চলের ঘটনা এটি। সেখানে ভূমিকম্প চলাকালীন একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় দৃশ্যটি ধরা পড়েছিল। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটি ৭ দশমিক ৫ মাত্রা গণনা করা হয়েছিল । অর্থাৎ এটি ১১ দশমিক ৫ মাত্রায় হওয়া কোনো ভূমিকম্পের ভিডিও না।

গুজবের উৎস:

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ভাইরাল ভিডিওটির মূল উৎসের সন্ধান করতে সেখান থেকে একটি স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজে সার্চ করে হুবহু একই সাদৃশ্যের আরও কিছু ভিডিও পাওয়া যায়। তাছাড়া উক্ত ভিডিও নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া থেকে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ভূমিকম্পের সময়েই সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল ২৫ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিপুরেশ্বর চক অঞ্চলে। ৭ দশমিক ৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পটির কারণে প্রায় নয় হাজার মানুষ মারা যায় এবং আরও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়। ভিডিওটি নিয়ে দ্য গার্ডিয়ান থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে

উল্লেখ্য, ভিডিওটি নিয়ে ইন্ডিয়ান ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া টুডে থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। মূলত ৯ নভেম্বর ২০২২ তারিখে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হয়, সম্প্রতি নেপালে হয়ে যাওয়া ভুমিকম্পের ভিডিও এটি। ৬.৩ মাত্রায় ভূমিকম্পটি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ৯ নভেম্বর ২০২২তারিখে ইন্ডিয়া টুডে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, ৯ নভেম্বর ২০২২ তারিখের বলে যেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা মূলত ২৫ এপ্রিল ২০১৫ তারিখের। তাছাড়া ভাইরাল ভূমিকম্পটি ৬ দশমিক ৩ মাত্রার নয় বরং ৭ দশমিক ৫ মাত্রায় হয়েছিল। উলেখ্য, ৯ নভেম্বর ২০২২ তারিখেও নেপালে একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।

অর্থাৎ ভূমিকম্পের যেই ভিডিওটি পূর্বে ৬ দশমিক ৩ মাত্রায় হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল, সেই একই ভিডিও বর্তমানে ১১ দশমিক ৫ মাত্রায় হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গগত, পৃথিবীর সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পটির বিষয়ে জানতে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড নিয়ে সার্চ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ১৯৬০ সালে চিলিতে ৯ দশমিক ৫ মাত্রায় একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। এবং এটাকেই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয়। তাছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পটির মাত্রা ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ২ মাত্রা যা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত দেখুন এখানে এবং এখানে।

বলাবাহুল্য, ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণে ব্যবহৃত স্কেলের নাম রিখটার স্কেল। ১৯৩৫ সালে মার্কিন ভূকম্পবিদ ও পদার্থবিদ চার্লস এফ রিখটার ভূমিকম্প পরিমাপের স্কেলটি তৈরি করেন। তার নামেই এর নাম রাখা হয় রিখটার স্কেল। রিখটার স্কেলে ০ থেকে ১০ মাত্রা পর্যন্ত মাপা যায় ভূমিকম্পের তীব্রতাকে। ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট কম্পন বা কম্পনের ঢেউ রেকর্ড করা হয় সিসমোমিটার দিয়ে। সিসমোমিটারে রেকর্ড হওয়া ভূকম্পনের বিস্তার, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে সিসমোমিটারের দূরত্ব বিবেচনা করে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা হয়। সেই সঙ্গে যোগ করা হয় ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব। এসব মিলিয়ে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা হয়। রিখটার স্কেলের বিশেষণ অনুযায়ী ১০ মাত্রার উপরে মাপা যায় না। তাই ১১ দশমিক ৫ মাত্রার কোনো ভূমিকম্প কার্যত নথিভুক্তও হবে না। আরও বিস্তারিত জানুন এখানে এবং এখানে।

সঙ্গত কারণে ১১ দশমিক ৫ মাত্রায় ভূমিকম্প হবার দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh