নবনির্বাচিত এমপি-মন্ত্রীদের বিরূদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র? 

Published on: February 29, 2024

যা দাবি করা হচ্ছেঃ ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য দাবিতে দুইটি তথ্য উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের নবনির্বাচিত ১৮০ জন এমপি এবং মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যদিও কিছু পোষ্টে এই সংখ্যা ২৮০ বলা হচ্ছে। অন্যটি হচ্ছে, পিটার হাস বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করার জন্য বাধ্য করেছে।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ভাইরাল ভিডিওটি হচ্ছে এই বৈঠক শেষে পিটার হাসের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়কার। সেখানে তিনি কোথাও বাংলাদেশের এমপি এবং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করা সংক্রান্ত কিছুই বলেননি। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের পরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নতুন করে কোনো ভিসানীতি আরোপ করেনি।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে,  এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ 

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ক্যাপশনে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য দাবিতে যেই তথ্যগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তার সত্যতা যাচাই করার জন্য শুরুতেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। সেখানে বাংলাদেশে নব-নিযুক্ত এমপি এবং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করতে বাধ্য করা সংক্রান্ত কোনো কিছুর উল্লেখ পাওয়া যায়নি। বরং, মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংলাপ, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার উপরে গুরুত্বারোপ করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চেয়েছেন।

তাই, এই ভিডিওটির উৎস খুঁজে পাওয়ার জন্য ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে এনটিভি নিউজের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত ভাইরাল ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওতে পিটার হাসের বক্তব্যের সাথে ভাইরাল ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত,  ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর নির্বাচন ভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে পিটার হাস বৈঠক করেছিলেন। ভাইরাল ভিডিওটি এই বৈঠকের পরে অনুষ্ঠিত পিটার হাসের সংবাদ সম্মেলনের, সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

আবার, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালের ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এক ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল। সেখানে উল্লেখ ছিল যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সরাসরি বাধাগ্রস্ত করা বা এর সাথে জড়িত থাকা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হয়ে যাবে। এই ঘোষণার প্রায় চার মাসের মাথায় গত ২২ সেপ্টেম্বর ভিসা-সংক্রান্ত এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে নিশ্চিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র অধিদপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

কিন্তু, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পরে নতুন করে আবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সংক্রান্ত কোনো তথ্য বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ড গোপন রাখা হয়। তাই দেশটি যে সকল ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে তাদের সংখ্যা প্রকাশ করলেও তাদের নাম-পরিচয় কখনও প্রকাশ করে না। অতএব ভিসা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া ব্যক্তিরা মন্ত্রী নাকি সংসদ সদস্য এ সম্পর্কে কোনো কিছু নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব নয়। যাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয় তারা নিজে থেকে যদি নিশ্চিত না করেন, তাহলে বাইরের কারও পক্ষে এ সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়।

আবার ভাইরাল পোস্টে অন্য আরেকটি দাবি হচ্ছে, পিটার হাস বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে আবারো তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে নির্বাচন আয়োজন করার জন্য বাধ্য করেছেন। কিন্তু, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবরের পরে পিটার হাস এবং কাজী হাবিবুল আউয়ালের মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত অফিসিয়াল কোনো বৈঠক হতে দেখা যায়নি। তাছাড়া, মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পিটার হাস বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে নির্বাচন আয়োজন করার জন্য বাধ্য করেছেন।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh