আগুন দেয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মীদের আটক হবার প্রতিবেদন করেছে দেশ-রূপান্তর?

Published on: November 15, 2023

“জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে আগুন দেওয়ার সময় দুই ছাত্রলীগ কর্মী আটক” শিরোনামে দৈনিক পত্রিকা দেশ রূপান্তরের একটি স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। স্ক্রিনশটটিতে সময় দেয়া আছে ০৫:২৯ পিএম এবং তারিখ ১৩ নভেম্বর, ২০২৩।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, দাবিটি মিথ্যা। বাসে আগুন দেয়াকে কেন্দ্র করে দেশ রূপান্তরের ওয়েবসাইটে ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে ০৫:২৯ মিনিটে “জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে আগুন দেওয়ার সময় দুই বিএনপি কর্মী আটক” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে ডিজিটাল এডিটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভাইরাল স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে এবং সেখানে শিরোনামের উপরে সম্পাদনা করা হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত ও অন্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে যার সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে  এবং এখানে।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাপশন যুক্ত করে অথবা ক্যাপশন ছাড়া দেশ রূপান্তরের স্ক্রিনশটটি আপলোড করা হয়েছে। যেখানে মূল দাবি ‘জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে আগুন দেওয়ার সময় দুই ছাত্রলীগ কর্মী আটক’। এমন শিরোনামে দেশ রূপান্তর পত্রিকা থেকে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে কিনা জানতে পত্রিকার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে “জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে আগুন দেওয়ার সময় দুই বিএনপি কর্মী আটক” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। উল্লেখ, প্রতিবেদনটির ফিচার ইমেজে যে দুজনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে হুবহু একই ছবি ভাইরাল পোস্টেও ব্যবহার করা হয়েছে। মূল প্রতিবেদন ও ভাইরাল  স্ক্রিনশটে একই সময় ও তারিখ উল্লেখ আছে অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখ  সময় ০৫:২৯ পিএম। মূল প্রতিবেদনে ঘটনার বিস্তারিত আছে ভাইরাল স্ক্রিনশটে শুধু শিরোনাম এবং তারিখ দেখা যাচ্ছে।

প্রতিবেদনটিতে মূল ঘটনার বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে,

“নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে বাসে আগুন দেওয়ার প্রস্তুতিকালে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোট চার বোতল পেট্রোল জব্দ করা হয়। পুলিশের দাবি, তারা বিএনপির কর্মী। সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকালে উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের মারুয়াদী এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। আটকৃতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের লস্করদী মধ্যপাড়া এলাকার মো. অপু মিয়া ওরফে আকাশ (১৯) এবং একই এলাকার মো. ফয়সাল আহম্মেদ মেহেদী (২৪)”

প্রসঙ্গগত যে thedailycampus.com নামক গণমাধ্যমে একই ঘটনার উপরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি “জুসের বোতলে অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতিকালে ২ বিএনপি কর্মী আটক” শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।  দেশ রূপান্তর ও তাঁদের প্রতিবেদনে ফিচার ইমেজে একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। অপরদিকে banglanews24.com গণমাধ্যমে থেকে ১৩ নভেম্বর,২০২৩ তারিখে একই ঘটনার উপরে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে তার শিরোনামে বলা হয়েছে “অবরোধ সমর্থনে অগ্নিসংযোগের  প্রস্তুতিকালে বিএনপির ২ কর্মী আটক” প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। এই প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে,  “নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবরোধ সমর্থনে অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতিকালে বিএনপির দুই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার মদনপুর-আড়াইহাজার সড়কের লস্করদী-মারুয়াদী এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি টায়ার ও চার বোতল পেট্রোল জব্দ করা হয়। আটকরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের লস্করদী মধ্যপাড়া এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে মো. অপু মিয়া ওরফে আকাশ (১৯) এবং একই এলাকার মৃত চান মিয়ার ছেলে মো. ফয়সাল আহম্মেদ মেহেদী (২৪)।

তিনটি পত্রিকার বিস্তারিত অংশ বিশ্লেষণে করে দেখা যাচ্ছে, আগুন লাগানো ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহ মো. ফয়সাল আহম্মেদ মেহেদী, মো. অপু মিয়া ওরফে আকাশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের ছবি গণমাধ্যমে ফিচার ইমেজে ব্যবহার করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, দেশ রূপান্তর পত্রিকা থেকে “জুসের বোতলে পেট্রোল ভরে আগুন দেওয়ার সময় দুই বিএনপি কর্মী আটক” শিরোনামে ব্যবহারের পূর্বে “পুলিশের দাবি” কথাটি লিখেছে।

অর্থাৎ, বাসে আগুন লাগানোর সাথে জড়িত সন্দেহ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁরা বিএনপি কর্মী – পুলিশের এই দাবি অনুযায়ী দেশ রূপান্তর পত্রিকা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই শিরোনামে বিএনপির বদলে ছাত্রলীগের নাম সম্পাদনা করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।

বলাবাহুল্য, বিষয়টি নিয়ে দেশ রূপান্তর পত্রিকা থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। দেখুন এখানে

যেহেতু দেশ রূপান্তর পত্রিকার ভুয়া স্ক্রিনশট বানানো হয়েছে এবং শিরোনাম বদল করে ভিন্ন অর্থ দাড় করানো হয়েছে। তাই তথ্য-প্রমাণের আলোকে ভাইরাল পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh