এটা কি চীনের কৃত্রিম সূর্যোদয়ের ভিডিও?

Published on: February 29, 2024

যা দাবি করা হচ্ছেঃ এটা চীনের কৃত্রিম সূর্যোদয়ের ভিডিও।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে চীনের কৃত্রিম সূর্যোদয় সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। চীনের গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা ‘কৃত্রিম সূর্য’ তৈরি করা শুরু করলেও দেশটি থেকে এখন পর্যন্ত কৃত্রিম সূর্য উৎক্ষেপণ করা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, ২০১৭ সালের ৫ জুন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা লঞ্চ প্যাড থেকে জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল এমকে-৩ (GSLV MK III) রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এই রকেটটি  তখন জিস্যাট-১৯ উপগ্রহকে সাথে নিয়ে যাত্রা করেছিল। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি মূলত সেই সময়কার।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ 

ভাইরাল ভিডিওটি সত্যিই চীনের কৃত্রিম সূর্যোদয়ের কি না এ ব্যাপারে জানার জন্য শুরুতেই এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়।  অনুসন্ধানে ‘জাভা পাজেল’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর আপলোড করা ভাইরাল ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয় “মধ্যরাতে সূর্যোদয়। ইসরো- শ্রীহরিকোটা থেকে ৩৬ টি ব্রডব্যান্ড স্যাটেলাইট” (অনুবাদিত)।

পরবর্তীতে এর সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে দ্য ইকোনোমিক টাইমস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে  ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর তাদের সবচেয়ে ভারী রকেট GSLV MK III বা LVM3-এ চাপিয়ে ৩৬টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছিল। রকেটটি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে মধ্যরাত ১২:০৭ মিনিটের সময় উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

রকেটের ইঞ্জিন চালু করার পর থেকে উৎক্ষেপণ করা পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে আগুনের ফুলকি এবং ধোঁয়া নির্গমন হয়। এর ফলে রকেটে উৎক্ষেপণের সময় অন্ধকার থাকলেও তাতে চারদিক আলোকিত হয়ে যায়। ইসরোর LVM3 রকেটটি মধ্যরাতে উৎক্ষেপণ করার সময়ও এই একই ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনাকেই চীনের কৃত্রিম সূর্যোদয় বলে দাবি করা হচ্ছে।

পরবর্তীতে  গুগল ম্যাপের সাহায্যে ইসরোর সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের একটি স্যাটেলাইট ভিউ সন্ধান করা হয়। সেখানে ইসরো লঞ্চ ভিউ গ্যালারি নামের একটি স্থানের সাথে ভাইরাল ভিডিওর বেশ কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, চীনে কৃত্রিম সূর্যোদয় সম্পর্কে মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তবে, চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি (Xinhua News Agency) এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক (EAST) বা চীনের “কৃত্রিম সূর্য” ৪০৩ সেকেন্ডের জন্য একটি স্থির-স্থায়ী উচ্চ-সীমাবদ্ধ দীর্ঘ-প্লাজমা অপারেশনের রেকর্ড অর্জন করেছে। এরপরে, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ৩ জানুয়ারি  “চায়না’স নিউ ফিউশন এনার্জি ইনকর্পোরেটেড ‘কৃত্রিম সূর্য’ তৈরি করার জন্য জাতীয় সম্পদ সংগ্রহ করবে” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, চীন ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি শিল্প প্রোটোটাইপ ফিউশন রিঅ্যাক্টর তৈরি করার লক্ষ্য ধার্য করেছে। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে এতটুকু বলা যায় যে, চীন এখনও কৃত্রিম সূর্য উৎক্ষেপণ করেনি বরং, এটা এখনও গবেষণার স্তরেই আছে।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh