ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া শিশুটির ছবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বানানো

Published on: December 10, 2023

গত অক্টোবর ২০২৩ এ হামাস এবং ইসরায়েলের সংঘাত শুরু হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছিলো। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে একটি শিশু কোন ধ্বংসস্তুপের মাঝে আটকে আছে। ছবির ক্যাপশনে “ফি*লি*স্তি*ন জি ন্দা বা দ” লেখাটি পড়ে মনে হতে পারে যে সে একজন ফিলিস্তিনি শিশু। তবে ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে যে, উক্ত ছবিটি অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের অনেক আগে থেকেই ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি। অর্থাৎ, ছবিতে যে শিশুকে দেখা যাচ্ছে সে বাস্তব নয়। তাই সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “বিকৃত” বলে সাব্যস্ত করছে।

এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটি ধ্বংসস্তুপের মাঝে আটকে পড়া কোন ফিলিস্তিনি শিশুর কিনা তা যাচাই করতে উক্ত ছবিটি নিয়ে আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করেছি। আমাদের অনুসন্ধানে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এ @ana_wbas3 নামক এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে শেয়ারকৃত কয়েকটি ছবি সংবলিত একটি পোস্ট পাওয়া গেছে, যার মাঝে একটি ছবির সাথে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ধ্বংসস্তুপের মাঝে আটকে পড়া শিশুর ছবিটির মিল রয়েছে। এক্স হ্যান্ডেল থেকে শেয়ারকৃত সেই পোস্টটিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এ তুরস্ক এবং সিরিয়ার সীমান্তে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে এবং পোস্টের ক্যাপশনে সিরিয়ার পতাকার ইমোজি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটির অনুরূপ আরেকটি ছবি দশ মাস আগে অর্থাৎ, ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এ Noman Islam নামক একটি লিংকড ইন প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা হয়েছিলো। 

প্রকাশের তারিখ থেকে বোঝা যাচ্ছে ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

 

এদিকে, দি কুইন্ট, বুম ইন্ডিয়া, এবং এএফপি ফ্যাক্ট চেকের মতো ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলো সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ধ্বংসস্তুপের মাঝে আটকে পড়া শিশুটির ছবি নিয়ে কাজ করেছে। তারা যাচাই করে দেখেছে ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। তারা ভিডিও ও ছবি সনাক্ত করার বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাছাড়া, খালি চোখেও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটির ডানপাশে নিচের দিকে দৃশ্যমান শিশুটির হাতের আঙ্গুলে কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবি কিংবা ভিডিও শনাক্তকরণের একটি সাধারণ সূত্র। কেননা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্যান্য কাজ খুব নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে পারলেও মানুষের হাত এবং আঙ্গুল নিয়ে এখনও ভালোভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারছে না। মানুষের হাত এবং আঙ্গুল নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমাবদ্ধতা বিষয়ে বিবিসি সায়েন্স ফোকাসের আগ্রহোদ্দীপক এই লেখাটি পড়ুন এখানে। 

ধ্বংসস্তুপের মাঝে আটকে পড়া শিশুটির হাতের আঙ্গুলে অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে (লাল বৃত্তের মাঝে)।

 

হাত এবং আঙ্গুলের অসঙ্গতিকে সূত্র হিসেবে ধরে ফ্যাক্টওয়াচ দুটো ছবি শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছিলো, যেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বানানো। পড়ুন এখানে এবং এখানে। 

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ধ্বংসস্তুপের মাঝে আটকে পড়া শিশুর ছবিটি সাম্প্রতিক হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের সময়কার নয় এবং সেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বানানো। অর্থাৎ, ছবির শিশুটি বাস্তব নয়। 

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “বিকৃত” বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh