“অ’ ককা হাতী” – ভিডিওটি ভারতের আসামের

Published on: December 14, 2023

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি ছড়া কেটে অভিনয় করে দেখানোর ভিডিওকে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে, যার মন্তব্যের ঘরে নেটিজেনরা এটাকে বাংলাদেশের নতুন কারিকুলামের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভিডিও ভেবে মন্তব্য করছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখেছে, উক্ত ভিডিওটি বাংলাদেশের কোন শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভিডিও নয়। বরং এটি ভারতের আসামের একটি স্কুলে পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত “অ’ ককা হাতী” নামক একটি ভঙ্গিমা গীত গেয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিনয় করে দেখানোর ভিডিও। তাই সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটি আসলে বাংলাদেশের নতুন কারিকুলামের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভিডিও কিনা তা যাচাই করতে উক্ত ভিডিও থেকে কিছু স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি। পরে উক্ত ভিডিওতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে ছড়া কেটে অভিনয় করছিলেন সেটার কথা (অ’ ককা হাতী, মই যে তোমাৰ নাতি) লিখে অনুসন্ধান করা হয়। এবার ‘Assam Learning Centre’ নামক ফেসবুক পেজ থেকে গত ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ এ প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া গেছে, যার সাথে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির বেশ মিল রয়েছে। উক্ত ফেসবুক পেজে যোগাযোগের ঠিকানা হিসেবে ভারতের আসামের গৌহাটি নামক জায়গার কথা লেখা রয়েছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে পেজটি আসামের। তাছাড়া, দুটো ভিডিওতেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একই ছড়া কাটতে দেখা গেছে। তাই প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করে নিচ্ছি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটি আসামের।

তাছাড়া, ছড়াটির কথা লিখে অনুসন্ধান করে গত ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ এ ‘প্ৰাণজিৎ পৰশ’ নামক ফেসবুক প্রোফাইল থেকে শেয়ারকৃত একটি ভিডিও পাওয়া গেছে, যার সাথে আলোচিত শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভিডিওর বেশ মিল রয়েছে। ভিডিওটি দেখুন এখানে

পরবর্তীতে “অ’ ককা হাতী, মই যে তোমাৰ নাতি” – ছড়াটি আসামের স্কুলে পড়ানো হয় কিনা তা অনুসন্ধান করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘Biswajit Borah Education’ এবং ‘Assamese Knowledge Learning Hub’ নামক ইউটিউব চ্যানেলগুলো থেকে দুটো ভিডিও খুঁজে পাওয়া গেছে। এদের মাঝে Biswajit Borah Education নামক ইউটিউব চ্যানেল কর্তৃক প্রকাশিত “অ’ ককা হাতী মই যে তোমাৰ নাতি ভংগীমা গীত O koka hati moi j tumar nati Assamese vongima geet” – শীর্ষক শিরোনাম সংবলিত ভিডিওতে একটি বইয়ের প্রচ্ছদ লক্ষ্য করা গেছে, যার নাম অকণিৰ কৰ্মপুথি এবং এটি ক – শ্রেণীর শিশুদের পড়ানো হয়। উক্ত ভিডিওর পরের অংশে একটি ভঙ্গিমা গীত পাওয়া গেছে, যার সাথে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে ছড়া কাটছিলেন তার মিল রয়েছে। তাছাড়া, অ’ ককা হাতী, মই যে তোমাৰ নাতি – ভংগীমা গীতটি যে ক – শ্রেণীর অকণিৰ কৰ্মপুথি বই থেকে নেয়া হয়েছে সেটা নিশ্চিত হওয়া গেছে Assamese Knowledge Learning Hub নামক ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম থেকে। পাঠকদের সুবিধার্থে অকণিৰ কৰ্মপুথি বই থেকে আলোচিত ভংগীমা গীতটি হুবহু তুলে দেয়া হলো –

“অ’ ককা হাতী

মই যে তোমাৰ নাতি

তোমাৰ তলত সোমাই থাকিম 

মোক নালাগে ছাতি।

মস্ত এডাল শুঁৰ

আৰু মস্ত এটা পেট 

চকু দুটা ইমান সৰু

লাজ লাগি যায় ধেৎ।

অ’ ককা হাতী 

মই যে তোমাৰ নাতি 

মোৰ ওপৰত বহি নিদিবা 

পেট যাব ফাটি।”


 

এখন অকণিৰ কৰ্মপুথি বইটি আসামের স্কুলগুলোর পাঠ্যবই কিনা তা যাচাই করতে আমরা প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগলে অনুসন্ধান করি। আমাদের অনুসন্ধানে আসাম সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ক – শ্রেণীর শিশুদের জন্য পাঠ্য অকণিৰ কৰ্মপুথি বইয়ের একটি প্রচ্ছদ পাওয়া গেছে। যদিও আমরা পুরো বইটি পাইনি, তবু উপরে দুটো ইউটিউব ভিডিও থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে আলোচিত ভংগীমা গীতটি অকণিৰ কৰ্মপুথি বই থেকে নেয়া। এছাড়া, আসাম সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইসমূহের তালিকা থেকে জানা গেছে, অকণিৰ কৰ্মপুথি বইটি  অসমীয়া (Assamese) মাধ্যমে ক – শ্রেণীর শিশুদের পাঠ্যবই।

অতএব, এই বিষয়টি স্পষ্ট যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটি বাংলাদেশের শিক্ষক প্রশিক্ষণের নয়৷ বরং সেটা ভারতের আসামের একটি স্কুলে তাদের পাঠ্যবই থেকে নেয়া একটি ভংগীমা গীত গেয়ে অভিনয় করার দৃশ্য।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে দাবি করে বেশকিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেগুলোর সাথে নতুন শিক্ষাক্রমের কোন সম্পর্ক নেই। ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ভিডিওগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিসমূহ যাচাই করে দেখেছে এবং সেগুলোকে পুরানো বা ঘটনার সাথে অপ্রাসঙ্গিক বলে নাকচ করে দিয়েছে। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে, এবং এখানে। 

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh