“বিএনপির চলমান সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়” – বেদান্ত প্যাটেল এই কথা বলেছেন?

Published on: November 9, 2023

যা দাবি করা হচ্ছে: মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখ্য সহকারী মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল গত নভেম্বর ২০২৩ তাঁর নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “বিএনপির চলমান সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়।

যা আদতে ঘটেছে: গত নভেম্বর ২০২৩ অনুষ্ঠিত বেদান্ত প্যাটেলের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন প্রশ্নকর্তা তাঁকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং সরকারী সম্পত্তির ক্ষতিসাধন বিষয়ে অবগত করেন এবং তিনি (বেদান্ত প্যাটেল) বিএনপিকে তাদের সহিংসতা বন্ধ করে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান করবেন কি না তা জানতে চান। এই প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল কোথাও বিএনপির কথা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেন নি। তিনি বলেন, “আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং যে কোন সহিংসতার ঘটনা গুরুত্বের সাথে নিচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে সরকার, বিরোধী দল, সিভিল সোসাইটি, এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের আমরা একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি প্রেস ব্রিফিংয়ের পরবর্তী অংশে আরেকজন প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। আমরা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের উপর অন্য কোনো দলের পক্ষপাতী নই।অতএব, স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে বেদান্ত প্যাটেল বিএনপির চলমান সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়এমন কোন কথা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্ট এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনামকেবিভ্রান্তিকরবলে সাব্যস্ত করছে।

এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

সময় নিউজ, দৈনিক একাত্তরের সমর, এবং বহুমাত্রিক এর আর্কাইভকৃত সংবাদগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

বিএনপির চলমান সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়বেদান্ত প্যাটেল আদতে এই কথা বলেছিলেন কিনা তা যাচাই করতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে মুখ্য সহকারী মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলের গত নভেম্বর ২০২৩ অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংটি খুঁজে বের করি। কেননা, সামাজিক মাধ্যমের কিছু পোস্ট এবং কয়েকটি গণমাধ্যমের সংবাদে বেদান্ত প্যাটেলের নভেম্বরের প্রেস ব্রিফিংকে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়ছিলো। উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্নকর্তা এবং বেদান্ত প্যাটেলের প্রশ্নোত্তরের অংশগুলো এখানে হুবহু উপস্থাপন করা হলো:

QUESTION: Thank you so much, Vedant. Nice to see you up here. The Bangladeshi people, they want a free and fair election. U.S.A., from this room, they declared the C-3 visa policy, and now ongoing vandalism and destruction of public properties by Bangladesh Nationalist Party activists on the pretext of exercising democratic rights in contributing to the – disrupt the peaceful political environment to upheld the next parliamentary election in Bangladesh. Will you ask nationalist party to stop the violence and participate the upcoming general election? And I have another one.” (প্রশ্ন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, বেদান্ত। আপনাকে এখানে দেখে ভালো লাগলো। বাংলাদেশের জনগণ একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এই কক্ষ থেকে, C-3 ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, এবং এখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কর্মীরা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের অজুহাতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশকে ব্যাহত করছে। বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন। আপনি কি [বাংলাদেশ] জাতীয়তাবাদী দলকে সহিংসতা বন্ধ করে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বলবেন? এবং আমার আরেকটি প্রশ্ন আছে।)

MR PATEL: We continue to closely monitor the electoral environment in Bangladesh leading up to this January’s election, and we take any incidents of violence incredibly seriously. We are engaging and will continue to engage with the government, with opposition parties, with civil society, and other stakeholders to urge them to work together for the benefit of the Bangladeshi people.” (মিঃ প্যাটেল: আমরা এই জানুয়ারির নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সহিংসতার যে কোনো ঘটনাকে আমরা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। আমরা সরকারের সাথে, বিরোধী দলগুলোর সাথে, সুশীল সমাজের সাথে এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে বাংলাদেশী জনগণের স্বার্থে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।)

 

নভেম্বর ২০২৩ এর প্রেস ব্রিফিংয়ে আরেকজন প্রশ্নকর্তা জানতে চান: “[…] As the United States and the international community in Bangladesh are committed to creating a peaceful and credible environment for upcoming elections, for creating that environment, will you be with the people of Bangladesh and reflect their will under a new caretaker government?” (যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই পরিবেশ তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট কি বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে এবং একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে?) 

জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন: “It’s important to remember […] that the U.S. does not support any political party in Bangladesh. We don’t favor any one political party over the other. Right now our focus continues to be closely monitoring the electoral environment in Bangladesh leading up to January’s election, engaging appropriately with the government, with opposition leaders, with civil society and other stakeholders to urge them to work together for the benefit of the Bangladeshi people.” (এটা মনে রাখা জরুরি […] যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। আমরা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের উপর অন্য রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতী নই। এই মুহূর্তে আমাদের ফোকাস জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা, সরকারের সাথে, বিরোধী দলের নেতাদের সাথে, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে বাংলাদেশী জনগণের স্বার্থে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানানো।)

 

বেদান্ত প্যাটেলের নভেম্বর ২০২৩ অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ের যতগুলো জায়গায় বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এসেছিলো সেই অংশগুলো আমরা নিবিড়ভাবে পড়ে দেখেছি এবং উপরে সেগুলো হুবহু বাংলা অনুবাদসহ উপস্থাপন করেছি। 

উপরে উপস্থাপিত প্রশ্নোত্তরগুলোর কোথাও বেদান্ত প্যাটেলকে বিএনপির কথা নির্দিষ্ট করে বলতে দেখা যায় নি। বরং তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং যে কোন সহিংসতার ঘটনা গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোন একটি রাজনৈতিক দলের উপর অন্য কোনো দলের পক্ষপাতী নয় এবং জনগণের স্বার্থে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) সরকার, বিরোধী দল, সিভিল সোসাইটি, এবং স্টেকহোল্ডারদের একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছে। 

অতএব, বেদান্ত প্যাটেলযুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের যে কোন সহিংসতার ঘটনা গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে” – এই কথা বলেছেন। তবে, “বিএনপির চলমান সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়” – এমন কথা তিনি কোথাও বলেননি।   

মূলত, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সহিংসতার ঘটনাগুলোকে গুরুত্বের সাথে নিচ্ছেএই কথাটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন বিএনপির চলমান সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়। 

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্ট এবং গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনামগুলোকেবিভ্রান্তিকরবলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh