সিরিয়ার ক্যাম্প থেকে উদ্ধার হওয়া নারীরা কি ভারতীয় এবং বাংলাদেশি?

Published on: June 13, 2023

সম্প্রতি একটি ক্যাম্প থেকে সেনা সদস্য কর্তৃক কয়েকজন নারী উদ্ধার হওয়ার ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে এটি সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের ক্যাম্পে হামলা করে ভারত ও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ৩৮ জন হিন্দু নারীকে উদ্ধার করার ভিডিও। এবং “দ্য কেরালা স্টোরি” সিনেমাটি যে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত, ভিডিওটিকে এর প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি আল-হোল নামের উত্তর সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরের। সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া এই নারীরা ইয়াজিদি ছিল, ভারতীয় বা বাংলাদেশি নয়। আইএস এর জঙ্গিরা ইরাকের সেঙ্গাল/সিনজার শহর থেকে এই নারীদের অপহরণ করে ক্যাম্পে আটকে রেখেছিল। এই ঘটনার সাথে  “দ্য কেরালা স্টোরি” সিনেমার প্রেক্ষাপটের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। 

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

গত ৫ মে “দ্য কেরালা স্টোরি” সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই এর গল্প নিয়ে চরম বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে। এই সিনেমায়  কেরালার একদল নারীর লাভ জিহাদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে  ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (ISIS) এ যোগ দেয়ার গল্প দেখানো হয়েছে। কারও মতে এটি সত্য ঘটনা আবার অনেকেই একে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক গল্প বলে দাবি করছে

 ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টেও দাবি করা হচ্ছে, কেরালা স্টোরি সিনেমার গল্প সত্য। তাই ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি “দ্য কেরালা স্টোরি” সিনেমার গল্পের সাথে সত্যিই সম্পর্কিত কি না এ ব্যাপারে জানার জন্য ভিডিওটির উৎস অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। তাই ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ ধরে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে SDF PRESS নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আপলোড করা একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার সংক্ষিপ্ত সংস্করন হচ্ছে ভাইরাল ভিডিওটি। ইউটিউবে পাওয়া  ভিডিওর আরবি ভাষায় লেখা ক্যাপশন অনুবাদ করে জানা যায়, এটি দ্য ওমেন’স প্রটেকশন ইউনিটস (YPJ) থেকে প্রকাশ করা আল-হোল ক্যাম্পে বন্দী নারীদের মুক্ত করার ভিডিও ক্লিপ।

তাছাড়া The National News এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকেও ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আল-হোল ক্যাম্প থেকে বন্দী নারীদেরকে মুক্ত করার ভিডিও প্রকাশ করা হয়।

অন্যদিকে, ভাইরাল ভিডিওর ফ্রেমে একটি লোগো লক্ষ্য করা যায়। যেখানে একটি লাল তারার সাথে  লেখা ছিল: YPJ NAVENDA RAGIHANDINE। যার অনুবাদিত রূপ হচ্ছে ওয়াইপিজে কমিউনিকেশন সেন্টার।  YPJ হচ্ছে কুর্দি ভাষায় ‘নারী সুরক্ষা ইউনিট’- Yekîneyên Parastina Jin এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

এই সূত্র ধরে উদ্ধারকৃত নারীদের সম্পর্কে জানার জন্য পরবর্তিতে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে YPJ এর টুইটার অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেই অ্যাকাউন্ট থেকে  ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর করা একটি টুইটে আল-হোল ক্যাম্পে বন্দী নারীদের মুক্ত করার ভিডিও ক্লিপ খুঁজে পাওয়া যায়। এই টুইটের সাথে আরও কিছু টুইটার থ্রেড খুঁজে পাওয়া যায়। এই থ্রেডের চার নাম্বার টুইটে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা আছে যে, উদ্ধারকৃত নারীরা ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তারা ইরাকের সেঙ্গাল শহরের বাসিন্দা ছিলেন, এবং অল্প বয়সে সেখান থেকে তাদের অপহরণ করা হয়েছিল।

অতএব, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh