প্রধানমন্ত্রী কি পদত্যাগ করছেন?

Published on: July 11, 2023

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ এর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করছেন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। ভিডিওতে আরও দাবি করা হয় যে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ এর নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। উক্ত দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ বা নির্ভরযোগ্য সূত্র উক্ত ভিডিওগুলোতে প্রকাশ করা হয় নি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করলে মূলধারার গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক পদত্যাগের নির্দেশ বিষয়ক কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও পদত্যাগ বিষয়ক কোন প্রজ্ঞাপন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, পৃথিবীর কোনোদেশের সরকার প্রধানকে অন্যদেশের প্রধান কর্তৃক পদত্যাগের নির্দেশ দেয়ার কোনো চল নেই। বরং প্রধানমন্ত্রী তার দায়িত্বে বহাল রয়েছেন বলেই জানা যায়। এছাড়া, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার বরাবরই বলে আসছেন যে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করবেন না এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি ২০১১ সালেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় বিলোপ করে দেওয়া হয়েছে। তাই এসকল অসংগতি বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত দাবিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

এ সম্পর্কিত কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বা মার্কিন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক পদত্যাগের নির্দেশ বিষয়ক যে দাবিগুলো ছড়ানো হচ্ছে  সে সম্পর্কে শেয়ারকৃত ভিডিওতে কোন যুক্তি বা তথ্য উপাত্ত প্রদান করা হয় নি। ভিডিওগুলোর ক্যাপশনে যে দাবিগুলো করা হচ্ছে সেই দাবিগুলোর সপক্ষে ভিডিওতে কোন যুক্তি বা প্রাসঙ্গিকতা  খুঁজে পাওয়া যায় নি। পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। এমনকি মূলধারার কোনো গণমাধ্যমেও এমন কোনো খবর বা নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায় নি। যা থেকে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, দাবিটি ভিত্তিহীন।

বাংলাদেশ এ অবস্থিত মার্কিন দুতাবাস এর ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করলে ফ্যাক্টওয়াচ  মার্কিন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ বিষয়ক কোন তথ্য খুঁজে পায়নি। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর ওয়েবসাইট থেকেও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, সংসদীয় গণতন্ত্রে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদদের মতামতের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। অথবা তিনি যদি সংসদ সদস্যপদ হারান, সেক্ষেত্রে তার প্রধানমন্ত্রিত্ব থাকবে না। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো পাওয়া যাবে এখানে। এছাড়া, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রনায়কের পক্ষে এ ধরনের নির্দেশ প্রদান অবাস্তব, এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আসন্ন জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন এবং সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় বিলোপ করে দেওয়া হয়েছে। 

অতএব, সার্বিক তথ্য উপাত্ত বিবেচনায় ভাইরাল দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। বরং অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী এখনও তার দায়িত্বে বহাল রয়েছেন। তাই উক্ত দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh