বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপপ্রচার করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়েও দ্বীপটি নিয়ে অসম্পূর্ণ কিছু তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তথ্যগুলো হলো- সেন্ট মার্টিনে বা সাগরে মাছ ধরা বন্ধ, দ্বীপটিতে পর্যটক আসা সম্পুর্ণ বন্ধ, হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ তিনমাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পুর্ণ শাট ডাউন। যদিও এই তথ্যগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে সঠিক নয়।
উল্লেখিত চারটি বিষয় অনুসন্ধান করে করে যা পাওয়া যাচ্ছে তা হলো-
১। মা ইলিশ রক্ষায় গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত নদী ও সাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তবে ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নদী ও সাগরে মাছ ধরতে নেমেছেন জেলেরা।
২। প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে চার মাস পর্যটকদের যাতায়াত ও অবস্থান সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকে পর্যটকেরা দ্বীপটিতে যেতে পারছেন তবে রাত্রিযাপন করতে পারবেন না। আবার ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে যেতে পারবেন এবং রাতেও থাকতেও পারবেন। তবে এ সময় দিনে ২ হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন না। আর ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন না। পূর্বে দ্বীপটিতে নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত যাওয়া যেতো।
লক্ষণীয়, জাতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সরকার পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা– ইসিএ ঘোষণা করে। প্রায় আট বর্গকিলোমিটার জুড়ে থাকা দ্বীপটির স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। এ ছাড়া পর্যটক মিলে প্রতিদিন দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের চাপ নিয়ে এক প্রকার মৃতপ্রায় অবস্থা সেন্টমার্টিনের। অতি দ্রুত পর্যটকের স্রোত ঠেকানো না গেলে এ দ্বীপের পরিবেশে ভারসাম্য ফেরানো রীতিমতো অসম্ভব হবে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে দ্বীপটি যে কোনো সময়ে সমুদ্রে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা। মানুষের কোলাহল এবং সৈকত ও পানিতে অতিরিক্ত দূষণের কারণে দ্বীপের বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে সামুদ্রিক কাছিম। তাই পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক সংখ্যা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
৩। দ্বীপটিতে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছে ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এর মাধ্যমেই স্থানীয়রা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা পায়। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এই দুটি চিকিৎসা কেন্দ্রে স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করতেন। যার ফলে দ্বীপের বাসিন্দাদের সঠিক চিকিৎসা সেবা দেয়া কঠিন ছিলো। যে কারনে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ জন এনজিও কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে দ্বীপের হাসপাতালটি চালু রাখা হয়। এনজিও কর্মকর্তাদের মাঝে তিনজন ছিলেন চিকিৎসক। এদিকে এনজিওটির প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে জুন মাসে। তাই এনজিও থেকে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তারা আর সেখানে নেই। অতীতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সরকারিভাবে সেন্ট মার্টিনে ডাক্তারের পোস্টিং হলেও তারা যোগদানের পর আবার অন্য কোথাও চলে যান। তাই দ্বীপটির বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবা বিঘ্ন ঘটে অধিকাংশ সময়। বর্তমানে সেখানো কোনো চিকিৎসক বা নার্স নেই।
৪। এ কথা সত্য যে, ১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎহীন ছিলেন সেন্টমার্টিনবাসী। সেন্ট মার্টিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ব্লু-মেরিন এনার্জি লিমিটেড জানিয়েছিল, বাংলাদেশে স্কুব টেকনোলজি লিমিটেড নিয়ন্ত্রিত সোলার প্রজেক্টগুলোর টোকেন রিচার্জ সফটওয়্যারের সার্ভারে সমস্যার কারণে বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যদিও একদিন পরেই দ্বীপবাসী বিদ্যুৎ ফিরে পেয়েছে। সমস্যার সমাধান হয়েছে।
সুতরাং সেন্ট মার্টিনে বা সাগরে মাছ ধরা বন্ধ, দ্বীপটিতে পর্যটক আসা সম্পুর্ণ বন্ধ, হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ তিনমাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পুর্ণ শাট ডাউন এমন দাবির প্রকৃত অবস্থা এই যে সবকিছু নিয়ম-মাফিক হয়েছে। চিকিৎসা সেবা ব্যতিত সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যাচ্ছে এমন দাবি নিছক অনুমান নির্ভর।
তাই উপরে উল্লেখিত দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “আংশিক মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ফ্যাক্টওয়াচ এই প্রতিবেদনটি লিখতে যেই রিসোর্সের সাহায্য নিয়েছে তা দেখা যাবে এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
No Factcheck schema data available.
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh